সাতকাহন সমরেশ মজুমদারের এক অসামান্য উপন্যাস।
এক বাঙালি নারীর জীবন সংগ্রামের সুদীর্ঘ উপাখ্যান। ১৯৪৭ এর দেশবিভাগ পরবর্তী প্রেক্ষাপটে উপন্যাসের কাহিনীর শুরু। পশ্চিমবঙ্গের এক চা বাগানে প্রকৃতির সান্নিধ্যে বেড়ে ওঠা এক মেয়ে দীপাবলীকে বাল্যবিবাহের শিকার হয়ে শিশু বয়সেই হতে হয়েছিল বিধবা। জীবনের সকল যন্ত্রণাকে পেছনে ফেলে সে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াতে শিখেছিল। পরিবার ও সমাজের সকল বাধা পেরিয়ে সে নিজেকে সাবলম্বী করার প্রয়াস পেয়েছিল। বৈধব্য জীবনের উপর সমাজের চাপিয়ে দেয়া সংস্কার সে ধীরে ধীরে ঝেড়ে ফেলেছিল। চারপাশে ভীড় করে থাকা স্বার্থান্বেষী মানুষ আর সমাজে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা অন্যায় সংস্কারের বিপরীতে সে তাঁর নীতি নৈতিকতাকে আঁকড়ে ধরেছিল। জীবনের পথে পথে অজস্র সমস্যার সাথে একা লড়াই করে করেই সে পৌঁছে গিয়েছিল তাঁর অভীষ্ট লক্ষ্যে। কিন্তু সেই দীপাবলী তবুও হার মানেনি তাঁর উপর চেপে বসা নীতিবিবর্জিত সমাজব্যবস্থার কাছে। সে লড়ে গেছে প্রতিনিয়ত।
সাতকাহন (১ম পর্ব)
সাতকাহন (২য় পর্ব)
সমরেশ মজুমদার
বাংলা উপন্যাস
বাংলা জনপ্রিয় উপন্যাস
বাংলা জনপ্রিয় লেখকের উপন্যাস
সাতকাহন
Satkahon
Somoresh mojumdar
Satkahon by Somoresh mojumdar
উপন্যাসে উঠে এসেছে পঞ্চাশের দশকের পশ্চিমবঙ্গ বিশেষ করে কলকাতা ও শহরতলীর মানুষের জীবনযাত্রা, আচরণ, সংস্কার ইত্যাদি। সে সময়কালে তৎকালীন পূর্ববঙ্গ থেকে পশ্চিমবঙ্গে স্থানান্তর হওয়া শরণার্থী বাঙালিদের সামাজিক অবস্থা, জীবন সংগ্রাম ও তাঁদের প্রতি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর বিরূপ মনোভাবও এতে প্রকাশ পেয়েছে। নারীদের সেকেলে মানসিকতা এবং নারীদের প্রতি তৎকালীন সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকটভাবে ধরা পড়েছে লেখকের প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গিতে। এছাড়াও এই উপন্যাসে পাত্র পাত্রীদের মাধ্যমে উঠে এসেছে দুর্বল ও দুর্নীতিগ্রস্থ প্রশাসন, সমাজের ধূর্ত লোকদের অর্থবিত্ত -প্রতিপত্তি, প্রশাসনে দুষ্ট লোকেদের প্রভাব এবং সাধারণ মানুষ ও দীপাবলীর মতো সৎ কর্মকর্তার অসহায়ত্ব। তাইতো, অর্জুন নায়েকের মতো ধূর্তদের কাছে দীপাবলীকে হার মানতে হলেও নীতির কাছে সে হার মানেনি। আয়কর বিভাগের চাকরিতে এসে সে দেখে দুর্নীতি সেখানে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। সেখানেও সে লড়ে যায় নিষ্ঠার সাথে অবিচল।
প্রতিকূলতার বিরূদ্ধে দীপাবলীর সংগ্রাম যে কোন হতাশ তরুণ-তরুণীর মনে দারুণ উদ্দীপনা জাগাতে সক্ষম। উপন্যাসের সামাজিক চিত্র এখনো আমাদের সমাজের জন্য শিক্ষণীয়। সাধারণ নারীদের চিন্তাভাবনা এখনো খুব একটা পালটায়নি। নারী স্বাধীনতায় বিশ্বাসীদের জন্য এই উপন্যাস হতে পারে এক সুন্দর কাঠামো। প্রশাসন ও সরকারি সার্ভিসগুলোর অবস্থা এপাড় বাংলাতেও সমান প্রযোজ্য। তাই, যারা স্রোতে গা ভাসাতে রাজী নন, যারা স্রোতের প্রতিকূলে ন্যায়নিষ্ঠতাকে অবলম্বন করতে আগ্রহী তাঁদের কাছে সাতকাহন হতে পারে উৎসাহব্যঞ্জক।