ময়ূরাক্ষী হুমায়ূন আহমেদের লেখা হিমু ধারাবাহিকের প্রথম উপন্যাস।
হুমায়ূন আহমেদ বিংশ শতাব্দীর বাঙালি জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম। তাঁকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী শ্রেষ্ঠ লেখক গণ্য করা হয়। হুমায়ূন আহমেদ একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার। বলা হয় আধুনিক বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের তিনি পথিকৃৎ। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসাবেও হুমায়ূন আহমেদ সমাদৃত। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা দুই শতাধিক। বাংলা কথাসাহিত্যে তিনি সংলাপপ্রধান নতুন শৈলীর জনক। তাঁর বেশ কিছু গ্রন্থ পৃথিবীর নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে, বেশ কিছু গ্রন্থ স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভুক্ত। সত্তর দশকের শেষভাগে থেকে শুরু করে মৃত্যু অবধি তিনি ছিলেন বাংলা গল্প-উপন্যাসের অপ্রতিদ্বন্দ্বী কারিগর। এই কালপর্বে তাঁর গল্প-উপন্যাসের জনপ্রিয়তা ছিল তুলনারহিত। হুমায়ূন আহমেদ এর সৃষ্ট হিমু ও মিসির আলি চরিত্রগুলি বাংলাদেশের যুবকশ্রেণীকে গভীরভাবে উদ্বেলিত করেছে। হুমায়ূন আহমেদ নির্মিত চলচ্চিত্রসমূহ পেয়েছে অসামান্য দর্শকপ্রিয়তা। তবে তাঁর টেলিভিশন নাটকগুলি ছিল সর্বাধিক জনপ্রিয়। সংখ্যায় বেশী না হলেও তাঁর রচিত গানগুলোও সবিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করে। তাঁর অন্যতম উপন্যাস হলো নন্দিত নরকে, মধ্যাহ্ন, জোছনা ও জননীর গল্প, মাতাল হাওয়া ইত্যাদি। তাঁর নির্মিত কয়েকটি চলচ্চিত্র হলো দুই দুয়ারী, শ্রাবণ মেঘের দিন, ঘেঁটুপুত্র কমলা ইত্যাদি।
চরিত্রসমূহ:-
===========
চৌধুরী খালেকুজ্জামান টুটুল/চৌধুরী ইমতিয়াজ টুটুল – হিমু
মীরা – জাস্টিস এম. সোবাহানের মেয়ে
বাদল – হিমুর ফুফাত ভাই
রিনকি – বাদলের বোন
রূপা – হিমুর বান্ধবী
মজিদ – হিমুর বন্ধু
কাহিনী সংক্ষেপ
==============
হিমুর বাবা ছিলেন একজন বিকারগ্রস্ত মানুষ তিনি বিশ্বাস করতেন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার যদি প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করা যায় তবে একইভাবে মহাপুরুষও তৈরি করা সম্ভব। তিনি মহাপুরুষ তৈরির জন্য একটি বিদ্যালয় তৈরি করেছিলেন যার একমাত্র ছাত্র ছিল তার সন্তান হিমু। এই মহাপুরুষ তৈরির জন্যই সে তার স্ত্রীকে হত্যা করে। একসময় হিমুর বাবা অসুস্থ হয়ে মারা যান। মারা যাওয়ার আগে তিনি হিমুকে বলে যান সে যেন ১৬ বছর পর্যন্ত তার মাতৃকুল অর্থাৎ তাঁর মামাদের কাছে থাকে। সাথে এও সতর্ক করে দিয়ে যান তাঁর মামারা পিশাচ প্রকৃতির। পিশাচ শ্রেণির মানুষের সংস্পর্শে না এলে মানুষের সৎ গুন সম্পর্কে ধারনা হবে না।
একসময় হিমু বড় হয়। মেট্রিক পাসের পর তাঁর ফুফুর বাড়িতে আসে। সেখানেও এক সমস্যা হয়। তাঁর ফুফাত ভাই তাঁর সংস্পর্শে এসে তাঁর ভক্ত হয় এবং ৩ বার ইন্টারমিডিয়েটে ফেল করে। বাদল হিমুকে মহাপুরুষ মনে করে। হিমুর প্রতি রয়েছে তাঁর অগাধ বিশ্বাস।
ইউনিভার্সিটিতে পড়ার ২ বছর পর প্রথম কথা হয় রূপার সাথে। একসময় সে ভালোবেসে ফেলে হিমুকে কিন্তু হিমু তাকে ধরা দেয় না ঠিক তেমনিই চলেও যায় না সে। সে যে মহাপুরুষ হওয়ার সাধনা করছে সে কেমন করে স্বাভাবিক হয়ে রূপার কাছে যাবে।
ফ্লাপে লিখা কথা
===============
ময়ূরাক্ষী নদীকে একবারই আমি স্বপ্নে দেখি। নদীটা আমার মনের ভেতর পুরোপুরি গাঁথা হয়ে যায়। অবাক হয়ে লক্ষ করি কোথাও বসে একটু চেষ্টা করলেই নদীটা আমি দেখতে পাই। তারজন্যে আমাকে কোনো কষ্ট করতে হয় না। চোখ বন্ধ করতে হয় না, কিছু না। একবার নদীটা বের করে আনতে পারলে সময় কাটানো কোনো সমস্যা নয়। ঘন্টার পর ঘন্টা আমি নদীর তীরে হাঁটি। নদীর হিম শীতল জলে পা ডুবিয়ে বসি। শরীর জুড়িয়ে যায়। ঘূঘুর ডাকে চোখ ভিজে ওঠে।